গভীর সমুদ্রবন্দর হতে যাচ্ছে মাতারবাড়ীতে। ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হবে এ-বন্দর। জানা গিয়েছে, ২০২৬ সাল নাগাদ জাহজ ভিড়তে পারবে এই বন্দরে।
জাহাজ চলাচলের কৃত্রিম নৌপথ বা চ্যানেল বানানোর জন্য বঙ্গোপসাগর উপকূলে লবণমাঠ খনন করা হচ্ছে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম খননযন্ত্র ‘ক্যাসিওপিয়া–ফাইভ’ বালু-মাটি খুঁড়ে চলছে এখন। স্রোত প্রতিরোধক পাথরের বাঁধও দেওয়া হচ্ছে। জানা গিয়েছে, সাগর থেকে নৌপথে প্রবেশ মুখে হাতের ডান দিকে নির্মিত হবে এ নতুন টার্মিনাল।
বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর হতে যাচ্ছে এই লবণমাঠ, যেটা মাতারবাড়ী টার্মিনাল নামে পরিচিতি পাবে।
গেল শনিবার, এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে কর্ণফুলী নদীর কোস্টগার্ডের জেটি থেকে সাগরপথে প্রায় ৭০ কিলোমিটার যাওয়ার পর। কাগজে-কলমে বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রা তেমন কাজে আসছে না আমাদের ব্যবসায়ীদের। সোনাদিয়াতে অবস্থিত গভীর সমুদ্রবন্দরও ফাইলবন্দী হয়ে আছে অনেক দিন ধরেই। কিন্তু কাগজে–কলমে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মাতারবাড়ী বন্দরের মূল কার্যক্রম ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা-জাইকা, চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
মাতারবাড়ী বন্দরের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার মূল কারণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নৌপথ খনন করে আমদানি করা কয়লা খালাসের টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে। একই নৌপথ ব্যবহারের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মাতারবাড়ী বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের পথও সুগম হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য মো. জাফর আলম মাতারবাড়ী বন্দর ঘুরে দেখার সময় জানান, “জাপানের আইগিরিতে অবস্থিত কাশিমা বন্দরের আদলে তৈরি করা হচ্ছে এই বন্দর। ১৯৬২ সালে কাশিমা বন্দরের যখন নির্মাণকাজ শুরু হয়, তখন সেখানে ছিল ধানখেত। তবে বন্দর নির্মাণের পর সেটি ব্যবসা–বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। বিশ্বের বড় বড় ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে বন্দর ঘিরেই। মাতারবাড়ী বন্দর ঘিরে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”
মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণে প্রাথমিক পরিকল্পনায় রয়েছে দুটি টার্মিনাল। সাধারণ পণ্যবাহী ও কনটেইনার টার্মিনালে মাদার ভ্যাসেল বা বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে, যেটা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না। প্রথম পর্যায়ে বন্দর ও পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক নির্মাণসহ খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে প্রথম ধাপের কাজ শেষ হতে। পরের ধাপে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে টার্মিনালের সংখ্যা।
বে টার্মিনাল, পায়রা ও মাতারবাড়ী নামে তিনটি আলাদা বন্দর তুলনা করে দেখা গিয়েছে, মাতারবাড়ী বন্দর সুবিধায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে। চীনের সঙ্গে সমুদ্রপথে আমদানি বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি হয়। চীন থেকে সরাসরি বড় কনটেইনার জাহাজগুলো আসতে পারবে মাতারবাড়ী বন্দর তৈরি হলে। এখন গড়ে প্রতিটি জাহাজে ১ হাজার ৮৭৮টি কনটেইনার পণ্য আনা-নেওয়া হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। এই বন্দরের চলাচলকারী চারটি জাহাজের সমান কনটেইনার আনা-নেওয়া করা যাবে এক জাহাজে মাতারবাড়ীতে।
যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই বন্দরের কার্যক্রম শেষ হয় তাহলে তা দেশের পণ্য পরিবহনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো