আপনি জেনে খুব অবাক হবেন যে, নানা ধরণের পণ্য পরিবহনে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অন্যতম জনপ্রিয় বাহন ট্রাক। কারখানার উৎপাদিত পণ্য, ভারী যন্ত্রাংশ কিংবা জীবিত পশুপাল, এমনকি মিসাইল পরিবহনেও ট্রাক দরকার হয়। আর সড়কপথে পণ্য পরিবহনের একমাত্র সহজলভ্য উপায় হল ট্রাক।
টাইটেলেই দেখেছেন, পৃথিবীতে প্রায় ১৯ ধরনের ট্রাক রয়েছে। এগুলো দেখতে যেমন ভিন্ন তেমনি ভার বহন করার ক্ষমতাও ভিন্ন।
আসুন ট্রাকের রকমফের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই
পিকআপ ট্রাকঃ খুবই জনপ্রিয় এই ট্রাক মূলত ফার্নিচার ও ছোট পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এই ট্রাকের প্রচলন আছে।
অস্ট্রেলিয়ান রোড ট্রেনঃ এই ট্রাকগুলো এতই লম্বা হয় যে অনেকে ট্রেন ভেবেও ভুল করেন। অস্ট্রেলিয়াতে এই ধরণের ট্রাক বেশ কার্যকরী।
বোট হউলেজঃ ছোটবড় নানা ধরণের নৌকা, প্রমোদতরী বহনের জন্য এই ট্রাক খুবই জনপ্রিয়। এই ট্রাকগুলো ভারী নৌযান পরিবহনের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়।
কার ট্রান্সপোর্টারঃ গাড়ি পরিবহনের জন্য লম্বা রাস্তা পারি দিতে এই ট্রাক বেশ কাজে দেয়। একে কার ক্যারিয়ার ট্রেইলারও বলা হয়ে থাকে।
সিমেন্ট ট্রাকঃ সিমেন্ট ট্রাককে কংক্রিট মিক্সারও বলা হয়। এটি প্রয়োজনীয় স্থানে মিক্সিং সরঞ্জামসহ চলে যায়। এরপর ট্রাকেই কংক্রিট মিক্সের মতো জটিল কাজ শেষ হয়। বাংলাদেশেও এই ট্রাক বেশ প্রচলিত।
চিলার ট্রাকঃ চিলার ট্রাককে রেফ্রিজারেটর ট্রাকও বলে। এই ধরণের ট্রাকে ফল, কাঁচা সবজি, মাছ ও মাংস পরিবহন হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই ট্রাক বাজারজাত হয়।
ক্রেন ট্রাকঃ এই ধরণের ট্রাকে তারের সাথে কপিকল লাগানো থাকে। শক্ত স্ট্যান্ডের সাথে তারের দড়ি দিয়ে একটি হুক লাগানো হয় যেটার মাধ্যমে পণ্য উঠানো-নামানো সহজ হয়।
ফায়ার ট্রাকঃ ফায়ার ট্রাক পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আছে। অগ্নি নির্বাপণের কাজে এই ট্রাক ব্যবহৃত হয়। এই ট্রাকে সাইরেন সিস্টেম থেকে শুরু করে আগুন নিভানোর জন্য সবধরনের সরঞ্জাম থাকে।
টো-ট্রাকঃ রাস্তায় হঠাৎ বিকল হওয়া, দুর্ঘটনায় নষ্ট হওয়া, অনির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং করা গাড়ি সরানোর কাজে এই ট্রাক ব্যবহার করা হয়। এই ট্রাক ১৯১৬ সালে প্রথম উদ্ভাবন করা হয়। এই ট্রাককে রেকার ট্রাকও বলা হয়ে থাকে।
ফ্লাট-বেড ট্রেইলারঃ এই ধরণের ট্রাকে কোন সাইড বার কিংবা ছাদ থাকে না। অনেক ভারী পণ্য কিংবা কনটেইনার পরিবহনে এই ট্রাক ব্যবহার করা হয়।
ফার্নিচার ট্রাকঃ এই ধরণের ট্রাক বাংলাদেশের বাইরে খুব বেশি দেখা যায়। বাসা বদলের সময় ফার্নিচার পরিবহনে এই ট্রাক বেশ ভালো সার্ভিস দেয়। ট্রাকের ড্রাইভাররা সাধারণত পণ্য লোড ও আনলোডে সাহায্য করে।
হাইওয়ে মেইনটেনেন্স ট্রাকঃ হাইওয়ে কিংবা সড়ক মেরামতের ক্ষেত্রে বিশেষ এই ট্রাক ব্যবহার করা হয়। এই ট্রাকে নানা ধরণের সরঞ্জাম সংযুক্ত করা থাকে যা রাস্তা মেরামতের কাজে সাহায্য করে।
লাইভস্টক ট্রাকঃ গবাদি পশু পরিবহনে এই ট্রাক বেশ কার্যকরী। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে এই ধরণের ট্রাক বেশ প্রচলিত।
লগিং ট্রাকঃ বড় বড় গাছের গুড়ি পরিবহনে এই ট্রাক ব্যবহৃত হয়। ১৯১৩ সালে আবিষ্কৃত এই ট্রাক অনেক দেশেই পরিবহন খাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
স্নো-প্লওসঃ শীতপ্রধান দেশে তুষারপাত হয়ে রাস্তাঘাট ঢেকে যায়। তখন চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে পড়ে। সেই পরিস্থিতিতে তুষার সরাতে এই ট্রাক ব্যবহার করা হয়।
ট্যাংকারঃ তরল পদার্থ পরিবহনে এই ট্রাক ব্যবহার করা হয়। তেল, পানি, রাসায়নিক পদার্থ পরিবহনে এই ট্রাক সমগ্র পৃথিবীজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই ট্রাক বেশ জনপ্রিয়।
টিপার ট্রাক/ডাম্প ট্রাকঃ বালি, মাটি, নুড়ি-পাথর পরিবহনে এই ট্রাক খুব কার্যকরী। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এই ট্রাক আছে। আমাদের দেশেই বিভিন্ন বড় বড় প্রজেক্টে এই ট্রাক অনেক দেখা যায়।
ট্রেইলার ট্রাকঃ মালবাহী ট্রেইলার ট্রাকগুলো অনেক ক্ষেত্রে ৩৫ থেক ৪০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। লম্বা দূরত্বে ভারী পণ্য পরিবহনে এই ট্রাক বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়।
কাভার্ড ট্রাকঃ পণ্য পরিবহনে কাভার্ড ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান বহুল প্রচলিত একটি ট্রাক। পুরো পৃথিবীজুড়েই এই ট্রাকের প্রচলন আছে। বিভিন্ন ধরণের পণ্য বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, প্রসাধনী সামগ্রী এই ধরণের ট্রাকে বেশি পরিবহন করা হয়।
সভ্যতা বিনির্মাণে, উন্নয়নে এবং অগ্রযাত্রায় ট্রাকের বিকল্প নেই। বিভিন্ন প্রয়োজনে এসব ট্রাক আমাদের জীবনকে করছে আরও সহজ এবং গতিশীল। আর পণ্য পরিবহনে প্রযুক্তি এনে এই ক্ষেত্রকে ডিজিটাল করেছে জিম ডিজিটাল ট্রাক। এখানে ট্রাক মালিক, ড্রাইভার ও কাস্টমার একসাথে কাজ করেন একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ফলে ট্রিপ তৈরি থেকে শুরু করে মালামাল গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটি একজন মোবাইলেই করতে পারবেন। জিমে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বাংলাদেশে প্রচলিত সব ধরণের ট্রাক পাওয়া যায়।