যত দিন যাচ্ছে করোনাভাইরাসের বিস্তার ততোই বাড়ছে। সারা বিশ্বজুড়ে বেশ উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে এই করোনাভাইরাস। তাই পুরো পৃথিবীর মানুষ বর্তমানে অনেকটা গৃহবন্দী জীবন কাটাচ্ছে। লকডাউন, কারফিউ জারি ও সামাজিক দূরত্বসহ নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধের চেষ্টা চলছে। কারণ, এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।
তাই এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলাই সর্বোত্তম। আর মনে রাখবেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আপনার হাতই দিতে পারে সুরক্ষা। তাই আসুন আজ জেনে নেই, হাত কখন ও কিভাবে আমাদেরকে ধুতে হবে।
কখন হাত ধুতে হবে?
- বাড়ি থেকে বের হলেই হাত ধুতে হবে, সেটা অল্প সময়ের জন্য হোক কিংবা বেশি সময়ের জন্য।
- লকডাউনের জন্য অনেকেই বাসার ছাদে উঠছেন। ছাদে উঠতে গিয়ে সিঁড়ির রেলিং ধরলে বাসায় ফিরে হাত ধুতে হবে।
- নিষেধ থাকা সত্ত্বেও যদি কারো সাথে হাত মিলিয়ে ফেলেন, তবে হাত ধুতে কিন্তু ভুলবেন না।
- শরীরের কোন ক্ষতস্থানে হাত দিলে, ঔষধ দিলে হাত ধুতে হবে।
- নাক ঝাড়লে কিংবা হাত দিয়ে হাঁচি-কাশি আটকালে হাত ধুতে ভুলবেন না।
- পোষা পাখি/প্রাণীর গায়ে হাত দিলে ও হাত দিয়ে খাবার দিলে, এরপর হাত ধুয়ে ফেলা উত্তম।
- ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের পর হাত ধুতে হবে।
- নিজের বা অপরের জুতোয় হাত দিলে, হাত ধুতে দেরি করবেন না।
- বাসায় কিংবা বাইরে, বাথরুম থেকে বের হওয়ার আগে হাত ধুতে হবে।
- খাবারের আগে ও পরে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
- আপনি যদি রান্না করেন তাহলে রান্না শুরুর পূর্বে ও শেষে হাত ধোয়া উত্তম।
- বাসায় ছোট বাচ্চা থাকলে তাদের ডায়াপার বদলের পর হাত ধুতে দেরি করবেন না।
- বাসায় কেউ অসুস্থ থাকলে যেমন ধরুন ডায়রিয়া আক্রান্ত, তার সেবাযত্ন আপনি যতবার করবেন, ততবার হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন।
- টাকা কিংবা অন্য কারো মোবাইল ধরলে হাত সাথে সাথে ধুয়ে ফেলবেন।
কখন হাত ধুতে হবে তা জানলাম। এবার আসুন জেনে নেই কতক্ষণ ধোবেন-
হাত কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ধুতে হবে। এটা নিয়ে কোন হেলাফেলা করা যাবে না। ২০ সেকেন্ড সময় যদি খুব বেশি মনে হয় তাহলে প্রিয় কোন গান ২০ সেকেন্ড গুণ গুণ করে গাইতে গাইতে হাত ধোবেন অথবা মনে মনে ১ থেকে ২০ পর্যন্ত গুনতে পারেন। ফলে, হাতও ধোয়া হবে, নিরাপদ থাকবেন এবং সময়টাও ভালো কাটবে।
হাত যেভাবে ধোবেন-
- প্রথমেই পরিষ্কার পানিতে হাত ভিজিয়ে নিন। জমানো কিংবা নোংরা পানিতে হাত ভিজাবেন না।
- এরপর হাতে সাবান মেখে ভালো করে ডলে ডলে ফেনা তুলুন।
- আপনার হাতের তালু, উল্টো পিঠ, আঙ্গুলের ডগা ও আঙ্গুলের মাঝে ভালো করে ঘষুন।
- এবার পরিষ্কার পানিতে হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
- যদি বাইরে থাকেন সেক্ষেত্রে টিস্যু দিয়ে কল বন্ধ করুন।
- পরিষ্কার টিস্যু, টাওয়েল অথবা গামছা দিয়ে হাত ভালো করে মুছে ফেলুন। অন্যের ব্যবহার করা কিছু দিয়ে হাত মোছা যাবে না।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার যেভাবে ব্যবহার করবেন-
বর্তমানে, পরিস্থিতি অনুযায়ী আপনাকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। প্রথমেই যেটা মনে রাখবেন, যে সমস্ত স্যানিটাইজারে ৬০% বা তার উপরে এলকোহল আছে সেগুলো জীবাণু ও ভাইরাসের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। তাই হাতের কাছে যখন সাবান, পানি থাকবে না তখন আপনি এই স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন। গনপরিবহনে যাতায়াত করলে পকেট কিংবা ব্যাগে স্যানিটাইজার রাখুন। পাবলিক প্লেসে কোন কাজ করতে হলে, অনেক মানুষ জমায়েত হয় এমন স্থানে যেতে হলে, স্যানিটাইজার সাথেই রাখুন। স্যানিটাইজার ব্যবহারে এক বা দু ফোঁটা হাতে নিয়ে হাতের দুই পিঠ, তালু, আঙ্গুলের ফাঁকে এবং আঙ্গুলের ডগা ভালোভাবে ঘষে নিন।
একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আপনাকে মনে রাখতে হবে, ”অ্যালকোহল” থাকার কারণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিন্তু অতি মাত্রায় দাহ্য। তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হ্যান্ডরাব/হেক্সিসল জাতীয় দ্রব্য হাতে মেখে সাথে সাথে আগুনের কাছে যাওয়া যাবে না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হ্যান্ডরাব/হেক্সিসল জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করার পর হাতে হাত ঘষে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিশুদের নাগালের বাইরে রাখবেন। কারণ, ভুল করে কেউ খেলে মৃত্যুঝুঁকি আছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ব্যাপারগুলো জানা থাকা খুব জরুরী। তাই এই বিষয়গুলো জানার পাশাপাশি মেনে চলতে হবে এবং অন্যদেরকেও শেয়ার করতে হবে। সচেতনতার মধ্য দিয়েই করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।