বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের বহির্নোঙরে (আউটার) বড় জাহাজ থেকে খোলা পণ্য লাইটারিংয়ে আমদানিকারকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন শিপ হ্যান্ডলিং সিন্ডিকেটের কাছে।
অনেকটা ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দারের মতো প্রয়োজনীয় হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট ছাড়াই বছরের পর বছর একচেটিয়া ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে এই সিন্ডিকেটটি। এর মাশুল দিতে হচ্ছে বড় বড় আমদানিকারক, বড় শিল্প গ্রুপের কারখানা ও দেশের ভোক্তা সাধারণকে।
গভীরতা কম হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলের বড় জাহাজগুলো গম, সার, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, কয়লা ইত্যাদি খোলাপণ্য নিয়ে সরাসরি মূল জেটিতে আসতে পারে না। ফলে বহির্নোঙরে এসব জাহাজকে অপেক্ষা করতে হয়। সেখানে ছোট ছোট জাহাজে করে পণ্য খালাসের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের কারখানা, নদীবন্দর সংশ্লিষ্ট গুদামে নিয়ে যেতে হয়। ফলে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য খালাসের এই কাজটি শিপ হ্যান্ডলিং সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আরও জানা যায়, ২০০৭ সালের আগে শিপ হ্যান্ডলিংয়ের কাজটি করতো লাইসেন্সধারী প্রায় ৫৬টি স্টিভিডোর কোম্পানি। তবে কাজে গতি আনতে স্টিভিডোর কোম্পানিগুলো থেকে বাছাই করে বার্থ অপারেটর, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরে পরবর্তীতে ভাগ করা হয়।
এরপর ২০১৫ সালের মার্চে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ শিপ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ৩১টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে ২৬টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ, আমদানিকারকের পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে। বাকি ৫টি প্রতিষ্ঠান নিজেদের আমদানি করা পণ্যই শুধু হ্যান্ডলিং করে থাকে। এর মধ্যে ওই ২৬টি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের হয়রানি, বাড়তি টাকা দাবি, কাজে সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সম্প্রতি একটি চালানের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৫৯ হাজার টন পাথর আমদানিতে শিপ হ্যান্ডলিং প্রতিষ্ঠানকে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে ফুডিং চার্জ এসেছে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা, পে লোডার হায়ার চার্জ ৪৪ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে গ্র্যাব হায়ার চার্জ, জ্বালানি খরচ, লাইটার ভাড়া, ব্রেকডাউন হায়ার, বোট হায়ার, গিয়ার কস্ট, জাহাজের ক্ষয়ক্ষতির দাবি, আয়কর, সিপিএ লেবার ওয়েলফার ফান্ডের চাঁদা ইত্যাদি। ২৪ শতাংশ খরচ করে শিপ হ্যান্ডলিং প্রতিষ্ঠানটি লাভ করে ৭৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, শিপ হ্যান্ডলিংয়ে যারাই কাজ করুক দক্ষতা ও দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট ও লজিস্টিক সাপোর্ট প্রতিষ্ঠানের থাকতে হবে। বন্দর ব্যবহারকারীদের খরচ কমাতে হবে যেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও শিল্পকারখানার মালিকদের দাবি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শিপ হ্যান্ডলিং কার্যক্রম উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ বাংলানিউজ২৪.কম