নোটিফিকেশনের শব্দ পেতেই দুলাল মোবাইল হাতে নেয়। ঢাকা টু উখিয়া একটা ট্রিপ আছে। সিমেন্ট যাবে ৪০০ বস্তা যা তার ২০ টনের ট্রাকে সহজেই এঁটে যাবে। সে বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিড করে অপেক্ষা করতে থাকে।
মিনিট দুয়েক বসে থেকেই দুলাল সিদ্ধান্ত নেয়, মোড়ের দোকানে গিয়ে চা-সিগারেট খেতে হবে। কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করা খুব কঠিন আর সেটা যদি হয় বিড জেতার জন্য অপেক্ষা, তাহলে টেনশন বেশি। সিগারেটটা শেষ করেই দুলাল চায়ে চুমুক দেয়। চিনি কম হয়েছে, সে আব্বাস মিয়াকে বলে আরও বেশি চিনি দিতে। এমন সময় আবার নোটিফিকেশনের শব্দ। দুলাল প্যান্টের পকেট থেকে তাড়াতাড়ি মোবাইল বের করে।
সে বিডটি জিতেছে!
নারায়ণগঞ্জ থেকে সিমেন্ট লোড হবে। দ্রুত চা শেষ করে দুলাল বাসায় যায়, একটু পরেই রওনা দিবে সে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুলাল সিমেন্ট লোড করে রওনা দেয় এবং পরেরদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে সে উখিয়া পৌঁছায়। সিমেন্ট যাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সে সকালের নাস্তা শেষ করে রিসিভারকে ফোন দেয়। কিন্তু বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরেও সে কল না ধরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দুলাল জিমের কল সেন্টারে ফোন দেয়।
জিম থেকে পণ্য রিসিভারের সাথে যোগাযোগ করার পর সে জানায় একটা জরুরী মিটিং-এ থাকার কারণে ফোন ধরতে পারেনি। তিনি সাথে সাথেই দুলালকে কল করে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প নং-২০ নম্বরে সিমেন্ট পাঠাতে হবে।
কিন্তু সেই ক্যাম্প তো পাহাড়ের উপরে!
দুলাল উখিয়ার ভিতরে বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর পাহাড়ি রাস্তার সামনে আসে। তার বড় ট্রাক এই রাস্তা দিয়ে উপরে উঠবে না। সে চিন্তিত হয়ে রিসিভারকে ফোন দেয়। রিসিভার জানায়, সিমেন্ট ক্যাম্পেই দিয়ে আসতে হবে। দুলাল আবারও জিমের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেয়। জিম সবদিক বিবেচনা করে দুলালকে অপেক্ষা করতে বলে এবং নতুন করে দুটো আলাদা ট্রিপ তৈরি করে। দুটো ছোট ছোট ট্রাক; দুলালের লোকেশন থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ নম্বরে পণ্য নিয়ে যাবে। বিড রিসিভের পর নতুন দুটো ট্রাকের তথ্য দুলালকে দেয় জিম। দুলাল তাদের সাথে বিস্তারিত কথা বলে জানতে পারে পরেরদিন সকালে তারা ট্রাক নিয়ে আসবে।
জিম থেকে দুলালকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়। সেই টাকা দিয়ে রাতে সে স্থানীয় একটি হোটেলে উঠে। এত ঝামেলার মধ্যে থেকেও জিমের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পাওয়ার কারণে সে স্বস্তিতে ঘুমাতে যায়।
পরেরদিন সকালে দুটো ট্রাক আসে। একটায় ১৫০ বস্তা ও অন্যটায় ২৫০ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দেয়। এবার আর কোন সমস্যা হয় না। ছোট দুটো ট্রাক সহজেই গন্তব্যে পৌঁছে যায়। ক্যাম্পে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার পর দুলাল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
সাহসিকতার সাথে রাতে উখিয়া থেকে ধৈর্য ধরে পণ্য যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার কারণে জিমের পক্ষ থেকে দুলালকে আন্তরিক ধন্যবাদ দেওয়া হয়।
এই দুলালের মতো দায়িত্ববান মানুষদেরকে পাশে পাওয়ার কারণে পণ্য পরিবহনে জিম প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে।