ট্রিপ পাইছি, আমি যাই। পাশের ঘরের ভাড়াটিয়া আজম তার ভাইকে এই কথা বলে বাইক স্টার্ট দেয়। নুরুর আজমকে দেখে ঈর্ষা হয়। কি সুন্দর মোবাইলেই ট্রিপ পায়। আর তাকে কত ঝক্কি পোহাতে হয়। আজম নুরুকে দেখে বাইক থামিয়ে বলে, “চল তোরে গলির মোড়ে নামাইয়া দিয়া যাই।”
নুরু বাইকে উঠে বলে, “তোরই কপাল, মোবাইলেই সব আছে, স্ট্যান্ডে যাওয়ার প্যারা নাই।”
আজম বলে, “তা তুইও ট্রাক ভাড়ার অ্যাপ নামাইয়া ট্রিপ মার।”
নুরু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “এমন কোন অ্যাপ আছে নাকি?”
আজম গলির মোড়ে এসে নুরুকে নামিয়ে মোবাইলে “জিম ডিজিটাল ট্রাক” দেখিয়ে দেয়।
সে বলে “ফেসবুকে এদের ম্যাসেজ দে, ওরাই সব করে দিবে। আমার গ্রামের এক ভাই জিম দিয়া খুলনা, চিটাগাং সব জায়গায় ট্রিপ মারে”।
ফেসবুকের মাধ্যমে নুরুর সাথে জিমের প্রতিনিধির কথা হয় এবং সে রেজিস্ট্রেশন করে। নুরু অ্যাপে ঢুকে দেখে মোট ২৩টি ট্রিপ আছে। সে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে সিলেটের একটি ট্রিপ পায়। পণ্য ময়মনসিংহ থেকে সিলেট যাবে। নুরু ট্রাক নিয়ে বের হয়। মনে মনে সে বেশ উত্তেজনা বোধ করে।
মোবাইলে কয়েক ঘণ্টার মাঝে ঘরে বসেই ট্রিপ!
সন্ধ্যার একটু পরেই ময়মনসিংহ থেকে থ্রি হুইলার ভর্তি করে ট্রাক নিয়ে রওনা দেয় নুরু। পথে যেতে কোন ঝামেলা হয় না তবে সিলেটের কাছাকাছি যেয়ে সে বেশ জ্যামে পড়ে। জ্যাম ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছে দেখে শো-রুম বন্ধ হয়ে গেছে। রাত ৯ টার মধ্যে পণ্য নিয়ে পৌঁছানোর কথা ছিল। নুরু মোবাইলে তাকিয়ে দেখে ১১টা বাজে। কাল সকালে তার অন্য একটা ট্রিপ আছে। এই পণ্য এখন ডেলিভারি না দিতে পারলে সকালের ট্রিপ মিস হবে আর সারারাত রাস্তায় মাল ভর্তি ট্রাক রাখাও নিরাপদ না।
নুরু কাস্টমারকে ফোন দেয়। শো রুমের মালিক জানায় থ্রি হুইলার তুলতে লেবার আর সিঁড়ি লাগবে। সিঁড়ি তার বাসায় আছে কিন্তু সেটা টেনে নিবে কে? নুরু নিজেই একটা ভ্যান নিয়ে তার বাসায় চলে যায়। সিঁড়ি ভ্যানে তুলে শো রুমে নিয়ে আসে। আর ভ্যন চালকে রাজি করার পণ্য তুলে দিতে সাহায্য করতে। কাস্টমার দেখে সিঁড়ি, লেবার সব রেডি। রাত ২টার মধ্যে সব কাজ শেষ করে নুরু ট্রাক নিয়ে রওনা দেয়।
মাথা ঠাণ্ডা রেখে চমৎকার এই সার্ভিস দেওয়ার জন্য জিমের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। পৌঁছাতে দেরি হলেও কাজ শেষ করতে পেরে নুরু নিজেও আনন্দিত। সে বেশ ফুরফুরে মেজাজে ট্রাক চালাতে থাকে। কারণ, ট্রিপ এখন তার মোবাইলেই আছে।