fbpx
সর্বশেষ আপডেটস
বিপদে ধৈর্য ধরে বরিশালের পথে মাসুমের ট্রাক

বিপদে ধৈর্য ধরে বরিশালের পথে মাসুমের ট্রাক

কাঁধে গামছা নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছিলো মাসুম। এমন সময় পাশ থেকে তার বন্ধু জয়নাল বলে, “কিরে কোন ট্রিপ আছে নাকি?” 

মুখ থেকে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে মাসুম বলে, “স্ট্যান্ডে কিছু নাই।”

হাই তুলতে তুলতে জয়নাল বলে, “আমি অনলাইনে ট্রিপ পাইছি, একটু পরে বাইর হমু।”

মাসুম তাড়াতাড়ি নিজের মোবাইলের ইন্টারনেট চালু করে। মুহূর্তেই জিম অ্যাপ থেকে নোটিফিকেশন পায় বরিশালে ট্রিপ আছে। স্টিল যাবে বরিশাল সদরে। ১ ঘন্টা আগে ট্রিপটা তৈরি হয়েছে। সে দ্রুত বিড করে। এমন সময় তার হেল্পার জনি মিয়া ফোন দিয়ে জানায় ট্রাক ঠিকমতো স্টার্ট নিচ্ছে না। মাসুমের মেজাজ সাথে সাথেই বিগড়ে যায়।

চিটাগংরোডের ট্রাক স্ট্যান্ডে তার ট্রাক থাকে। স্ট্যান্ডে যেতে যেতেই সে বিডটি জিতে। কিন্তু মনে আনন্দের বদলে টেনশন নিয়ে সে স্ট্যান্ডে হাজির হয়। তার ট্রাক বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর চালু হয়। তবে সমস্যা যে কিছু একটা হয়েছে সেটা মাসুম খুব ভালোই বুঝতে পারে। তাই সে দ্রুত মেকানিক ডেকে নিয়ে আসে। ট্রাক মেরামত করে মদনপুর স্টিল ডিপোতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল ৪টা বেজে যায় তার।

ডিপো আজকের মতো বন্ধ হয়ে গেছে!

মাসুম মনে মনে নিজেকে গালি দেয়। আজকে তার কপালটাই খারাপ। ট্রাকে সমস্যা হল একটু আগে আর এখন ডিপো বন্ধ! 

সে কাস্টমারকে কল করে সমস্যা বুঝিয়ে বলে। কাস্টমার জানায়, যদি কাল মালামাল লোড করে বরিশাল যায়, সেক্ষেত্রে একদিন পিছিয়ে যাবে। তাই পণ্য আনলোড বরিশাল সদরে করলে হবে না। সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে সুবিদখালীতে পণ্য নিয়ে যেতে হবে। মাসুম তাতেই রাজি হয়। সে ট্রিপটি মিস করতে চাচ্ছে না।

পরেরদিন যাতে সকাল সকাল সে পণ্য নিয়ে বরিশাল যেতে পারে সেজন্য রাতে ডিপোতেই থেকে যায়। পরদিন সকাল ৮টায় মাসুম পণ্য লোড করে বরিশালের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে মাওয়া ঘাটে সে জ্যামে আটকে থাকে ২ ঘন্টা। মাথা ভর্তি টেনশন নিয়ে সে যখন ফেরীতে উঠে তখন দুপুর হয়ে গেছে।

“ভাই কি এতো চিন্তা করেন?”

মাসুম মাথা ঘুড়িয়ে তাকিয়ে দেখে অল্প বয়সী একটা ছেলে চা-সিগারেট বিক্রি করছে। সে এক কাপ চা নিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। পদ্মা নদীর উত্তাল বাতাসে চায়ে চুমুক দিয়ে মাসুম কিছুটা আনমনা হয়ে যায়। সে গতকাল থেকে যা যা ঝামেলার মধ্য দিয়ে গিয়েছে তা ছেলেটাকে জানায়। ছেলেটা মাসুমকে বলে, “ধৈর্য ধইরা থাকেন ভাই। এমনও অনেক দিন যায় সারাদিন বৃষ্টি। এক কাপ চাও বেচতে পারি না।”

ছেলেটার কথা ভালো লাগে মাসুমের। মাওয়া ঘাট থেকে নেমে সে কোন তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে গাড়ি চালায়। পরদিন বিকেল ৪ টায় সে সুবিদখালী গিয়ে পৌঁছায়। কাস্টমার পণ্য বুঝে নেওয়ার পর বাড়তি ৬০ কিলোমিটার হিসাব করে মাসুমকে টাকা দেয়। মাসুম মনে মনে খুব খুশি হয়।

আসলেই ধৈর্য ধরে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ফেরার পথে মাসুম জিমের মাধ্যমে ট্রিপ পায়। তার খালি ট্রাক নিয়ে ফিরতে হবে না ভেবেই মুখে হাসি ফুটে উঠে। 

Check Also

বর্তমান সময়ে নিউ নরমাল শব্দটি আমরা সকলেই শুনেছি। চলতি বছরের শুরুর দিকে যখন পুরো বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, তখন আমাদের জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। আর নিউ নরমাল ব্যাপারটি সেখান থেকেই প্রতিটি সেক্টরে চলে আসে। স্থবির হয়ে থাকা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং একই সাথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার মাঝেও প্রান ফিরিয়ে আনতে এই নিউ নরমাল প্রেক্ষাপট খুবই গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। করোনার মাঝেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড ঘরে বসে কিভাবে করা যায়, তার পদ্ধতি গড়ে তুলেছে, যা চলমান নিউ নরমালের একটি বড় অংশ। এই সময়ে পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে একদিকে অনেকেই যেমন হিমশিম খেয়েছে, অন্যদিকে কারো কারো ব্যবসায় এসেছে গতি। আর এই গতি নিশ্চিত করেছে আইওটি নির্ভর কিংবা অ্যাপ ভিত্তিক পণ্য পরিবহন সেবা। করোনা পরিস্থিতির সময় বৃহৎ শিল্প যেমন- ইস্পাত, সিমেন্ট, অবকাঠামো, রিসাইক্লিং এর মতো পণ্য পরিবহনের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাপভিত্তিক সেবার উপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া করা একদিকে যেমন সহজ, অন্যদিকে সাশ্রয়ী। এছাড়াও, পণ্যের নিরাপত্তা থাকে এবং পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে থাকে স্বচ্ছতা। অ্যাপ ভিত্তিক পণ্য পরিবহন সেবার সবচেয়ে উপকারী দিক হচ্ছে, আপনি মোবাইলে কিংবা ল্যাপটপের মাধ্যমে, ঘরে বসেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছেন। আপনাকে বাইরে যেতে হচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে নিরাপদ থাকা যাচ্ছে এবং সময়ও বাঁচছে অনেক।

নিউ নরমালে পণ্য পরিবহন নিয়ে কি ভাবছেন?

বর্তমান সময়ে নিউ নরমাল শব্দটি আমরা সকলেই শুনেছি। চলতি বছরের শুরুর দিকে যখন পুরো বিশ্বে …

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।